BREAKING NEWS

Thursday, February 23, 2017

স্বাধীন সিকিম ও একজন লেন্দুপ দর্জি


স্বাধীন সিকিম ও একজন লেন্দুপ দর্জি  


লেন্দুপ দর্জি আলোচিত নাম। আলোচিত চরিত্র। বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক। ভারতীয় আধিপত্যবাদের সেবাদাস। ২০০২ সালে ভূষিত হন ভারতের ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাবে। এক সময়ের জনপ্রিয় এই নেতাকে দেশের মানুষ সম্মানের সাথে ডাকত কাজীসাব বলে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও ইন্দিরা গান্ধী নয়াদিল্লিতে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতেন। কিন্তু শেষ জীবনে ভারতের দ্বিতীয় সারির নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করতেও তাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়েছে। বেঁচে ছিলেন ১০২ বছর। দীর্ঘ দিন লিভারের জটিল রোগে ভুগছিলেন তিনি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিঃসঙ্গ, নিন্দিত ও ভীতসন্ত্রস্ত জীবনযাপন শেষে লেন্দুপ দর্জি মৃত্যুবরণ করেন।
তার পুরো নাম কাজী লেন্দুপ দর্জি খাং শেরপা। জন্মেছিলেন ১৯০৪ সালের ১১ অক্টোবর পূর্ব সিকিমের পাকিয়ং এলাকায়। মারা যান ২০০৭ সালের ২৮ জুলাই।
৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী স্বাধীন সিকিম এখন ভারতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য। আয়তন সাত হাজার ৯৬ বর্গকিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী লোকসংখ্যা ছয় লাখ সাত হাজার। সিকিমের ভূ-কৌশলগত অবস্থান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এ রাজ্যের উত্তরে চীন, পশ্চিমে নেপাল, পূর্বে ভুটান ও দক্ষিণে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং। সিকিম-তিব্বত (চীন) বাণিজ্যপথ ‘না থুলা পাস’ আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বহন করে। সামরিক গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোর সিকিমের কাছেই। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম দিকে সিকিমের অবস্থান। ঢাকা থেকে সড়কপথে রাজধানী গ্যাংটকের দূরত্ব ৬৫৪ কিলোমিটার। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের বিদায়ের পর মনিপুর, ত্রিপুরা, কুচবিহারসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদান করে অথবা যোগদানে বাধ্য করা হয়।
ব্রিটেনের কাছে সিকিম স্বাধীনতার নিশ্চয়তা লাভ করেছিল
সিকিমের স্বাধীন রাজাদের বলা হতো চগওয়াল। ভারতে ব্রিটিশ শাসন শুরুর আগে সিকিম তার পার্শ্ববর্তী নেপাল আর ভুটানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীন অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। ব্রিটিশরা আসার পর তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নেপালের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় সিকিম। এ সময় রাজা ছিলেন নামগয়াল। কিন্তু ব্রিটিশরা তিব্বতে যাওয়ার জন্য এক সময় সিকিম দখল করে নেয়, ১৮৮৮ সালে রাজা নামগয়াল আলোচনার জন্য কলকাতা গেলে তাকে বন্দী করা হয়।
১৮৯২ সালে তাকে মুক্তি দিয়ে সিকিমের স্বাধীনতাকে মেনে নেয়া হয়। প্রিন্স চার্লস ১৯০৫ সালে ভারত সফরে এলে চগওয়ালকে রাজার সম্মান দেয়া হয়। চোগওয়ালপুত্র সিডকং টুলকুকে অক্সফোর্ডে লেখাপড়া করতে পাঠানো হয়। টুলকু নামগয়াল ক্ষমতায় বসে সিকিমের ব্যাপক উন্নতি করেন। ব্রিটিশের কাছে সিকিম তার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা লাভ করেছিল।
গণভোটে সিকিমের মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে রায় দেয়
ব্রিটিশরা ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ছেড়ে যাওয়ার সময় গণভোটে সিকিমের মানুষ ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদানের বিরুদ্ধে রায় দেয়। ফলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহরু সিকিমকে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হন। ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের পর সিকিমের গুরুত্ব বেড়ে যায়। ১৯৬৩ সালে থাসি নামগয়াল এবং ১৯৬৪ সালে নেহরু মারা গেলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। চগওয়াল হন পাল্ডেন থন্ডুপ নামগয়াল। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সিকিম দখল করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। তিনি কাজে লাগান লেন্দুপ দর্জিকে।
সিকিম ছিল ব্রিটেনের আশ্রিত রাষ্ট্র
হিমালয়ের পাদদেশে ছোট্ট স্বাধীন দেশ সিকিমকে ভারতীয় ইউনিয়নের অঙ্গীভূত করার বিল ভারতীয় পার্লামেন্টে আনা হয় ১৯৭৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। ওই বিল পাস হয় ৩১০-৭ ভোটে। কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (সিপিআই-এম) বিপক্ষে ভোট দেয়। এবং সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের মে মাসে সিকিমকে পাকাপোক্তভাবে একটি অঙ্গরাজ্য করা হয়। এর আগে ব্রিটিশ ভারতে সিকিম ছিল একটি আশ্রিত রাষ্ট্র।
স্বভূমিজাত লেপচা উপজাতীয়রা সিকিমের জনসংখ্যার গরিষ্ঠ অংশ। তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও পোশাক। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে তিব্বত থেকে ভুটিয়ারা ও নেপাল থেকে নেপালিরা এসে বসতি স্থাপন করে। সিকিমের তিনটি ভাষা এখন প্রধান-লেপচা, ভুটানি ও নেপালি।
চতুর্দশ শতক থেকে নামগিয়াল বংশ সিকিমে রাজত্ব করে আসছিল। প্রথম শাসক পুনটমং নামগিয়াল। ১৬৪২ সালে তাকে চগিয়াল উপাধিতে ভূষিত করা হয়, যার অর্থ ধর্মীয় অনুশাসন অনুসরণ করে যিনি রাজকার্য পরিচালনা করেন। সর্বশেষ চগিয়ালকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় ১৯৭৫ সালে।
প্রথমে ভারত প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নেয়
৭২৯৮ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এই ছোট্ট দেশটির রাজধানী গ্যাংটক। ১৮৮৬ সালে এক চুক্তির অধীনে সিকিম আশ্রিত রাষ্ট্রের মর্যাদায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে যোগ দেয়। ১৮৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ছেড়ে চলে গেলে ওই চুক্তি অকার্যকর হয়ে পড়ে। ১৯৫০ সালে ভারতের সাথে সিকিমের চুক্তি হয়। এই চুক্তিতে সিকিমকে ভারতের আশ্রিত রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়া হয়। চুক্তির অধীনে প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপনা দেখাশোনার পুরো কর্তৃত্ব ভারত নিয়ে নেয়।
চগিয়াল ২৪ সদস্যের কাউন্সিলের মাধ্যমে দেশের শাসনকাজ পরিচালনা করতেন। এর মধ্যে ১৮ জন নির্বাচিত এবং ছয়জন চগিয়াল মনোনীত। কাউন্সিলে তিনটি দলের প্রতিনিধি ছিল ন্যাশনাল পার্টি, সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস ও সিকিম জনতা কংগ্রেস।
ভারতীয় পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব দিতে বাধ্য হন চগিয়াল
১৯৭৩ সালের মার্চ-এপ্রিলে ন্যাশনাল কংগ্রেস ও জনতা কংগ্রেস রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি তোলে। এই দাবিতে আন্দোলন দিনে দিনে তুমুল হতে থাকায় চগিয়ালের অনুরোধে ভারতীয় পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ওই ১৯৭৩ সালের ১৩ এপ্রিল ঘোষণা করা হয় যে, চগিয়াল রাজনৈতিক সংস্কার মেনে নিতে রাজি আছেন। এ ছাড়া তার আর কোনো উপায়ও ছিল না। কারণ তিনি স্পষ্টই অনুধাবন করেন এই আন্দোলনের পেছনের শক্তি কে? পরে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা স্বীকার করেছে যে, আন্দোলনে তাদের ভূমিকা ছিল। সংস্কারে রাজি না হলে সিংহাসন থেকে উৎখাত করা হবে, এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন নিশ্চিত। তাই সিকিমের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার চেষ্টায় রাজনৈতিক সংস্কারের অঙ্গীকার করেন। অঙ্গীকার মোতাবেক ১৯৭৪ সালের জুন সিকিম রাষ্ট্র আইনে পরিবর্তন আনা হয়। ওই আইনের অধীনে চগিয়ালের সার্বভৌম ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তিনি হন নিয়মতান্ত্রিক প্রধান। অবশ্য আইন পরিষদে পাস হওয়া আইন অনুমোদনে ক্ষমতা তাকে দেয়া হয়। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি। তাকে বিদায় নিতে হয়েছে।
সিকিম হত্যার উদ্যোগ নেন লেন্দুপ দর্জি
রাজনৈতিক সংস্কার অধীন ১৯৭৪ সালের ১ জুলাই সিকিমে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। দলটি আইন পরিষদের ৩২টি আসনের মধ্যে ৩১টি আসন পায়। দলের প্রধান কাজী লেন্দুপ দর্জি হন প্রধানমন্ত্রী। ভারত এটাই চেয়েছিল। কারণ কাজী লেন্দুপ দর্জি তো তাদেরই লোক।
এই নির্বাচনের পর সিকিমকে ভারতকে অঙ্গীভূত করার প্রস্তুতি নেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এর জন্য একটা বৈধতার প্রলেপ দরকার। সেটা করে দেন কাজী লেন্দুপ দর্জি। ১৯৭৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি বললেন, ভারতের দুই পরিষদ লোকসভা ও রাজ্যসভায় সিকিমের প্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা করেও সিকিমকে আশ্রিত রাষ্ট্রের মর্যাদায় রাখা যেতে পারে।
লেন্দুপ দর্জি যেহেতু ৩২টি আসনের ৩১টি আসনের নেতা, তার মতামতই তো সিকিম জনগণের মতামত। সুযোগটা হাতছাড়া করল না ভারত। কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫০ সালের চুক্তি, যাতে সিকিমকে ভারতের আশ্রিত রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়া হয়, তা বাতিল করল। সিকিমকে ভারতের অঙ্গরাজ্য করার বিল আনা হলো পার্লামেন্টে। এই বিল সম্পর্কে চগিয়াল এক বিবৃতিতে বললেন, ‘সিকিমের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব, যার নিশ্চয়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল ১৯৫০ সালের চুক্তিতে, তা সিকিম জনগণের সম্মতি ছাড়াই এবং অজ্ঞাতে ভারতের পার্লামেন্টে সিকিমের প্রতিনিধি নেয়ার ত্বরিত পদক্ষেপে অস্বীকার করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পাঠানো এক বার্তায় চগিয়াল বলেছেন, বর্তমান পদক্ষেপ, যা হবে ‘১৯৫০ সালের চুক্তির একপার্শিক বাতিলের শামিল এবং ভারতের সাথে সিকিমের একীকরণ।’
তিনি বলেন, ‘ভারত-সিকিম সম্পর্কের সর্বোচ্চ আশ্বাস দেয়া হয় ভারত প্রদত্ত সিকিমের অস্তিত্ব বজায় রাখার রক্ষাকবচের মাধ্যমে।’ তার এই বিবৃতিটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত অধুনালুপ্ত ইংরেজি দৈনিক আমৃতবাজার পত্রিকা ১৯৭৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর, সোমবার প্রকাশ করে।
চগিয়ালের বার্তা ছিল অরণ্যে রোদন
চগিয়ালের এই বার্তা অরণ্যে রোদনের শামিল। অত্যন্ত চাতুর্যের সাথে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে ফেলে সিকিমকে ভারতের অংশ করে নেয়া হলো। এ ঘটনায় ভারত তখন সারা বিশ্বে নিন্দাবাদ কুড়ায়। প্রতিবাদ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। প্রতিবাদে সিকিম দখল করে নেয়ার অভিযোগ করা হয়। কিন্তু চীন ছাড়া জাতিসঙ্ঘের বেশির ভাগ সদস্যরাষ্ট্র সিকিমের এ পরিবর্তনকে দ্রুত অনুমোদন করে।
রাজতন্ত্র বিলোপ হয় বিনা বিরোধিতায়
নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেটের ওপর ভর করে লেন্দুপ দর্জি নতুন গভর্নর নিয়োগের ক্ষমতা পান। চগিয়াল আর লেন্দুপ দর্জির সাপে নেউলে সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ভারত পৃথিবীর মানচিত্র থেকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মানচিত্র মুছে ফেলার মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগাতে এক মুহূর্তও দেরি করেনি। কাউন্সিল অব মিনিস্টারের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী লেন্দুপ দর্জির ইচ্ছায় পার্লামেন্টে বিনা বিরোধিতায় রাজতন্ত্রের আনুষ্ঠানিক অবসান করা হয়। সিকিমের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লেন্দুপ দর্জি ভারতীয় পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করার এবং স্টেটহুড স্ট্যাটাস পরিবর্তন করার আবেদন জানান। ১৪ এপ্রিল ১৯৭৫ সিকিমে ভারতীয় সেনাদের ছত্রছায়ায় এক গণভোট হয়। লেন্দুপের ইচ্ছার প্রতিফলন দেখানো হয় সাজানো গণভোটের ফলাফলে। ২৬ এপ্রিল ১৯৭৫ সিকিম ভারতের ২২তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়। মৃত্যু হয় একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের। ১৬ মে ১৯৭৫ সরকারিভাবে ভারত ইউনিয়নভুক্ত হয় এবং লেন্দুপ দর্জিকে করা হয় সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী। রাজতন্ত্রের পতনের ফলে ‘চগিয়াল’ পদের অবসান ঘটে। একটি স্বাধীন দেশ হত্যা করে লেন্দুপ দর্জি প্রধানমন্ত্রী থেকে হলেন মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত লেন্দুপ দর্জি সিকিমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আর ভারতের অঙ্গীভূত হওয়ার সাথে সাথে তার দলও ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেস দলে বিলীন হয়ে যায়।
পুরো নিয়ন্ত্রণের জন্য নেয়া হয় সামরিক অভিযান
সিকিমে ভারত সামরিক অভিযান শুরু করার আগে দেশটিতে অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। ইন্দিরা সরকার ভারতীয় বাহিনী পাঠানোর অজুহাত হিসেবে রাজার নিরাপত্তার কথা জানিয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজপ্রাসাদের সামনে দাঙ্গা ছড়িয়ে দেয়া হয়। এ কাজে তারা ব্যবহার করে লেন্দুপ দর্জিকে।
রাজতন্ত্র অবসানের পর সিকিম দখলে ভারতীয় সেনারা মুহুর্মুহু গুলি চালায়। প্রকাশ্য দিবালোকে সামরিক ট্রাকের গর্জন শুনে সিকিমের চগিয়াল দৌড়ে এসে দাঁড়ান জানালার পাশে। তিনি দেখেন, ভারতীয় সৈন্যরা রাজপ্রাসাদ ঘিরে ফেলেছে। মেশিনগানের মুহুর্মুহু গুলিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাজপ্রাসাদের ১৯ বছর বয়সী প্রহরী বসন্ত কুমার ছেত্রি ভারতীয় সেনাদের গুলিতে নিহত হন। আধা ঘণ্টার অপারেশনেই ২৪৩ প্রহরী আত্মসমর্পণ করে। বেলা পৌনে ১টার মধ্যেই ‘অপারেশন সিকিম’ শেষ হয়। প্রহরীদের কাছে যে অস্ত্র ছিল তা দিয়ে ভারতীয় সৈন্যদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু সময় লড়াই করা যেত। কিন্তু রাজা ভুগছিলেন সিদ্ধান্তহীনতায়। তিনি আরেকটি সুযোগ হারালেন। বেইজিং ও ইসলামাবাদের কাছে জরুরি সাহায্য চাওয়ার জন্য রাজপ্রাসাদে ট্রান্সমিটারও বসানো ছিল। তিনি সাহায্য কামনা করে বার্তা পাঠালে চীনা সৈন্যরা প্রয়োজনে সিকিমে ঢুকে চগিয়াল লামডেনকে উদ্ধার করতে পারত। কিন্তু রাজা সেটাও করতে ব্যর্থ হন। আত্মসমর্পণকারী রাজপ্রহরীদের ভারতীয় সেনাদের ট্রাকে তোলা হয়। প্রহরীরা তখনো গাইছিল ‘ডেলা সিল লাই গি, গ্যাং চাংকা সিবো’ (আমার প্রিয় মাতৃভূমি ফুলের মতো ফুটে থাকুক)। কিন্তু ততক্ষণে সিকিমের রাজপ্রাসাদে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে ভারতীয় জাতীয় পতাকা। নামগিয়াল সাম্রাজ্যের ১২তম রাজা চগিয়াল লামডেন তখন প্রাসাদে বন্দী।
বহির্বিশ্বের সাথে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়, বি এস দাশকে ভারত সরকার সিকিমের প্রধান প্রশাসক নিয়োগ করে।
সিকিমের ঘটনা বিশ্বকে জানান এক মার্কিন পর্বতারোহী
ভারতীয় আমেরিকান এক পর্বতারোহী গোপনে সিকিম প্রবেশ করে দেশটির স্বাধীনতা হরণের খবর বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। স্বাধীনতা হারানোর সময় সিকিম জাতিসঙ্ঘের সদস্য পদভুক্তিরও প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
১৯৭১ সালেই সিকিম দখলের সিদ্ধান্ত ছিল ভারতের
চমকপ্রদ একটি বিষয় হলো সিকিম সেনাবাহিনীকে সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। ভারতীয় সাংবাদিক সুধীর শর্মা ‘পেইন অব লুজিং এ নেশন’ (একটি জাতির হারিয়ে যাওয়ার বেদনা) নামে একটি প্রতিবেদনে জানান, ভারত ব্রিটিশদের কাছ থেকে তার স্বাধীনতা লাভের গোড়া থেকেই সিকিম দখলের পরিকল্পনা করেছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু অনেকের সাথে কথোপকথনে তার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সাবেক পরিচালক অশোক রায়না তার বই ‘ইনসাইড স্টোরি অব ইন্ডিয়াস সিক্রেট সার্ভিস’-এ সিকিম সম্পর্কে লিখেন, ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ১৯৭১ সালেই সিকিম দখল করবে। সে লক্ষ্যে সিকিমে প্রয়োজনীয় অবস্থা সৃষ্টির জন্য আন্দোলন, হত্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়। তারা ছোট ছোট ইস্যুকে বড় করার চেষ্টা করে এবং সফল হয়। তার মধ্যে হিন্দু-নেপালি ইস্যু অন্যতম। সাংবাদিক সুধীর শর্মা লিখেন, লেন্দুপ দর্জি নিজেই শর্মাকে বলেছেন, ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর লোকেরা বছরে দু-তিনবার তার সাথে দেখা করে পরামর্শ দিতেন কিভাবে আন্দোলন পরিচালনা করা যাবে। তাদের এক এজেন্ট তেজপাল সেন এ আন্দোলন পরিচালনার জন্য ব্যক্তিগতভাবে তাকে অর্থ দিয়ে যেতেন। এ অর্থ দিয়ে রাজনৈতিক সন্ত্রাস পরিচালিত হতো। শর্মা আরো লিখেছেন, এই ‘সিকিম মিশনের’ প্রধান চালিকাশক্তি ছিল ‘র’।
দ্বৈত খেলা খেলেছে ভারত
ভারত সিকিমের ক্ষেত্রে দ্বৈত খেলা খেলেছে। চূড়ান্ত মুহূর্ত আসার আগে পর্যন্ত চগিয়াল লামডেনকে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা বুঝতে দেয়নি। তারা তাকে বলেছে, সিকিমে রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হবে। চগিয়ালকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অনারারি মেজর জেনারেল পদবিও প্রদান করা হয়েছিল। অপর দিকে লেন্দুপ দর্জিকে বলেছে, যেকোনো মূল্যে রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করতে হবে।
চীন, নেপাল ও পাকিস্তানের পরামর্শে কান দেননি চগিয়াল
ভারত অন্তর্ভুক্তির সময় সিকিমে কর্মরত তৎকালীন ভারতীয় দূত (পলিটিক্যাল অফিসার) বি এস দাস তার গ্রন্থ ‘ঞযব ঝরশশরস ঝধমধ’-এ লিখেছেন, ভারতের জাতীয় স্বার্থেই সিকিমের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন ছিল। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করেছি। চগিয়াল যদি বিচক্ষণ হতেন এবং তার কার্ডগুলো ভালোভাবে খেলতে পারতেন, তাহলে ঘটনা যেভাবে ঘটেছে তা না হয়ে ভিন্ন কিছু হতে পারত।
চীন, নেপাল ও পাকিস্তানের পরামর্শে কান দেননি সিকিমের চগিয়াল। তিনি ভারতীয় নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে করম চাঁদ গান্ধী ও জওহরলাল নেহরুর প্রতি ছিলেন খুবই শ্রদ্ধাশীল। ১৯৭৪ সালে সিকিমের তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই চগিয়াল কাঠমান্ডু গিয়েছিলেন নেপালের রাজা বীরেন্দ্রর অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রাজা বীরেন্দ্র, সফররত চীনা উপপ্রধানমন্ত্রী চেন লাই ইয়ান এবং পাকিস্তানি দূত চগিয়ালকে সিকিমে না ফিরতে পরামর্শ দেন। ক্যাপ্টেন সোনাম এ প্রসঙ্গে বলেন, এই তিন দেশের নেতৃবৃন্দ সিকিমকে ভারতীয় আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে একটি মাস্টার প্ল্যান উপস্থাপন করেন। কিন্তু চগিয়াল লামদেন তাতে সম্মতি দেননি। এর কারণ তিনি নাকি স্বপ্নেও ভাবেননি, ভারত সিকিম দখল করে নিতে পারে।
চীন সীমান্তে ৩ স্বাধীন রাষ্ট্র নয়াদিল্লির জন্য অস্বস্তিকর ছিল
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও ১৯৭৪ সালে ভারতের পারমাণবিক বোমার সফল বিস্ফোরণ ইন্দিরা গান্ধীর আত্মবিশ্বাস বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়। কংগ্রেস নেত্রী নয়াদিল্লিতে তার ক্ষমতাকে সুসংহত করেন। নয়াদিল্লি উদ্বিগ্ন ছিল সিকিমের স্বাধীন সত্তার বিকাশ নিয়ে। ভুটানের পথ ধরে সিকিম যদি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসঙ্ঘের সদস্যপদ লাভ করে ফেলত, তাহলে তা হতো নয়াদিল্লির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বড় রকম বাধা। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চীন সীমান্তে তিন হিমালয়ান স্বাধীন রাজ্য নেপাল, সিকিম ও ভুটান গায়ে গা লাগিয়ে অবস্থান করুক এটাও কৌশলগত কারণে দিল্লি নিরাপদ মনে করেনি।
লেন্দুপ দর্জির শেষ জীবন ছিল অভিশপ্তের
ভারতে যোগদানের পর লেন্দুপ দর্জি হন সিকিমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে আসীন ছিলেন। তবে স্বর্গসুখের যে খোয়াব তিনি দেখেছিলেন, সেটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিল। তার দলের প্রতি জনগণের আস্থা পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে লেন্দুপ দর্জির এসএনসি একটি আসনও পায়নি। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে লেন্দুপ দর্জি দেখেন ভোটার তালিকায় তার নামটিও নেই। নেপথ্য শক্তি তার রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি টেনে দেয়।
সমকালীন ইতিহাসে সমালোচকদের কাছে লেন্দুপ দর্জি বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত। তার সমর্থকেরাও পরবর্তী সময়ে তাকে ত্যাগ করেন। ১৯৯৬ সালে কালিমপংয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসিত জীবন লেন্দুপ দর্জি দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘সবাই আমার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলছে, আমি নাকি নিজের মাতৃভূমি সিকিমকে বিক্রি করে দিয়েছি। তা যদি সত্যও হয় সে জন্য কি আমি একাই দায়ী?’ কিন্তু এই অভিযোগ এতই গুরুতর ছিল যে, লেন্দুপ দর্জি আর কখনোই সিকিমে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে যেতে পারেননি। চাকুং হাউজে আমৃত্যু তাকে নিঃসঙ্গ দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয়। তার মৃত্যু সিকিমবাসীর মনেও কোনো সহানুভূতি বা বেদনার উদ্রেক করতে পারেনি।
লেন্দুপ দর্জি মনে করতেন, কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর দিল্লি তাকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তার আক্ষেপভরা মন্তব্য, ‘সিকিমকে ভারতের হাতে তুলে দিতে হেন চেষ্টা নেই যা আমি করিনি। কিন্তু কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর নয়াদিল্লি আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে।’ সাপ্তাহিক জন আস্থা পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে লেন্দুপ দর্জি বলেন, ‘আগে নয়াদিল্লিতে আমাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করা হতো। এখন ভারতের দ্বিতীয় সারির নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করতেও আমাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়।
ভারতে অন্তর্ভুক্তি ছিল ভুল সিদ্ধান্ত
ভারতের সিকিম দখলের বিরুদ্ধে চীন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সিকিমের রাজপথে কোনো গণপ্রতিরোধ দেখা যায়নি। তাই বেইজিংয়ের ভূমিকা সীমিত ছিল জাতিসঙ্ঘে প্রতিক্রিয়া জানানোর মধ্যেই। ১৯৭৭ সালে ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর টানা ১১ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ১৯৭৮ সালে প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই সিকিম সম্পর্কে মুখ খোলেন। তার মতে, সিকিমের ভারতে অন্তর্ভুক্তি ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। এমনকি সিকিমের যেসব রাজনৈতিক নেতা ভারতে যোগদানের পক্ষে কাজ করেছিলেন, তারাও বলেছেন, এটা ছিল ঐতিহাসিক ভুল। কিন্তু তত দিনে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে।
ভারতের রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি সিকিমের বড় অর্জন
ভারতের এ কাজকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ সমর্থন না দিলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ভুলটা এ ব্যাপারেই করলেন তাজউদ্দিন আহমদ। ব্যক্তিগতভাবে মন্তব্য করলেন সিকিম সম্পর্কে এবং অজুহাত এসে গেল শেখ মুজিবের হাতে।
সিকিম সম্পর্কে তাজউদ্দিন আহমদের বক্তব্যটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালের ১৪ অক্টোবর সোমবার দ্য অমৃতবাজার পত্রিকায়। বাংলাদেশের কোনো পত্রিকায় সংবাদটি আসেনি।
ইংরেজি দৈনিক দ্য অমৃতবাজার পত্রিকার সেই খবর : ‘‘বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী মি. তাজউদ্দিন আহমদ গত রোববার ‘ভারত-বাংলা বন্ধুত্ব বিনাশে বৃহৎ শক্তিবর্গের পাকানো’ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকার জন্য ভারতীয় জনগণের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে ঢাকা ফেরার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে স্বল্প বিরতিকালে মি. আহমদ রিপোর্টারদের বলেন যে, সিকিম ইস্যু নিয়ে টোকিও, সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে ভারতের বিরুদ্ধে প্রচার চলছে। এসব জায়গায় কিছু সংবাদপত্র মন্তব্য করেছে যে, নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
ব্যক্তিগতভাবে মি. আহমদ মনে করেন যে, ভারতের একটি সহযোগী রাজ্য হিসেবে সিকিমের স্বীকৃতি ‘সিকিম জনগণের একটি অর্জন’।” এই ঘটনার কিছুদিন পর অবশ্য তাজউদ্দিন আহমদকে পদত্যাগ করতে হয়।
ভারতের নেতৃবৃন্দ বরাবরই অখণ্ড ভারত গড়ার স্বপ্নে বিভোর
ভারতের নেতৃবৃন্দ বরাবরই অখণ্ড ভারত গড়ার স্বপ্নে বিভোর। আর সে লক্ষ্যে ভারত চায় এর প্রতিবেশী দেশগুলোকে নানাভাবে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দুর্বল থেকে দুর্বলতর করে সেখানে লেন্দুপ দর্জির মতো তাঁবেদার সরকার বসিয়ে দেশটিকে ভারতের সাথে একীভূত করে নিতে। সিকিম তার বড় প্রমাণ। ভারতের প্রতিটি প্রতিবেশী দেশের মানুষকে এ অন্তর্নিহিত সত্যটি উপলব্ধিতে রেখে দেশ পরিচালনা করতে হবে। নইলে বিপর্যয় অবধারিত।
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ‘সিকিমফোবিয়া’
সিকিমের ঘটনা বাংলাদেশেও ঘটতে পারে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের প্রতিরক্ষা ভারত দিনের পর দিন জোরদার করায় এই আশঙ্কা আরো জোরালো হচ্ছে। এই কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশের সাথে যুক্ত সীমান্ত আউট পোস্টগুলোর (বিওপি) একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে ৪-৫ কিলোমিটারে নিয়ে আসা হচ্ছে। এগুলোতে বিএসএফের শক্তিও বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
বিএসএফ এই সীমান্তে থারমাল নাইটভিশন ডিভাইস, টেলিস্কোপিক বন্দুকসহ উচ্চমানের হাতিয়ার মোতায়েন রেখেছে। সেই সাথে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার এলাকাকে কাঁটাতারের বেড়াসহ ফ্লাডলাইটের আওতায় আনার এবং প্রশিক্ষিত কুকুর মোতায়েন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে অনেকটা এগিয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তের বেশির ভাগ এলাকা ফ্লাডলাইটের আওতায় আনা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
১৯৭৪ সালের ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো প্রতিরক্ষা কাঠামো নির্মাণ নিষিদ্ধ হলেও ভারত মানছে না। বলাবাহুল্য, কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ ও সড়ক তৈরি প্রতিরক্ষা কাজের মধ্যেই পড়ে। বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত দুই দেশের বৈঠকে বিষয়টি আলোচিত হলেও তা কোনো ফল দেয়নি। ভারতের বর্তমান প্রস্তুতি অনুযায়ী সীমান্ত সড়ক দিয়ে অনায়াসে সামরিক যান চলাচল করতে পারবে। এর ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভারত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও জোরদার করতে পারবে।
এ কারণেই বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে ‘সিকিমফোবিয়া’ কাজ করছে প্রবলভাবে। ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের অবিশ্বাসের অন্যতম কারণ হলো বাংলাদেশও সিকিমের পরিণতি বরনের অপেক্ষা মাত্র। 

Saturday, February 18, 2017

শিশু অধিকার এবং বাংলাদেশ

শিশু অধিকার এবং বাংলাদেশ
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে ১৮ বছরের কম বয়সী প্রত্যেককে শিশু বলা হয়েছে।বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রত্যেককে শিশু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।তাই ১৪ বছরের মধ্যে সকলেই এ দেশের শিশু। 

জাতিসংঘের শিশু সনদ এখন একটি আন্তর্জাতিক আইন। এতে বলা হযেছে, শিশুর বেঁচে থাকা তাদের জন্মগত অধিকার। এরই সাথে শিশুর জন্য নিচের অধিকার গুলির কথাও মনে রাখতে হবে আমাদের। ক) স্নেহ, ভালবাসা ও সমবেদনা পাওয়ার অধিকার, খ) পুষ্টিকর খাদ্য ও চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার অধিকার, গ) অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ, ঘ) খেলাধুলা ও আমোদ-প্রমোদের পূর্ণ সুযোগ পাওয়ার অধিকার, ঙ) একটি নাম ও নাগরিকত্ব, চ) পঙ্গু শিশুদের বিশেষ যত্ন ও সেবা শুশ্র“ষা পাওয়া অধিকার, ছ) দুর্যোগের সময় সবার আগে ত্রাণ ব্যবস্থা পাওয়ার অধিকার, জ) সমাজের কাজে লাগার উপযোগী হয়ে গড়ে ওঠার এবং ব্যক্তি সামর্থ অর্থাৎ সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাওয়ার অধিকার, ঝ) শান্তি ও বিশ্ব ভ্রাতৃত্বে মনোভাব নিয়ে গড়ে ওঠার সুযোগ পাওয়ার অধিকার, ঞ) এ সব অধিকার জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে বিশ্বের সব শিশুর ভোগের অধিকার থাকবে।

বাংলাদেশে শিশুদের অধিকার রক্ষা ও তাদের বিকাশের জন্য রয়েছে নানা আইন। কিন্তু তার পরেও বাংলাদেশে লঙ্ঘিত হচ্ছে শিশু অধিকার। সমাজ থেকে শিশু-কিশোরদের যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার কথা তা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিশুনীতিকে পাশ কাটিয়েই শিশুদের ভারী গৃহশ্রমসহ বেআইনি কাজে যুক্ত করা হচ্ছে। 



দেশে ১৪ বছরের কম বয়সীদের গৃহশ্রমে নিযুক্ত না করায় হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরও তা কার্যকর হচ্ছে না। বাংলাদেশে গৃহকর্মে নিয়োজিতদের সিংহভাগই কিশোর-কিশোরী ও শিশু। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০১০ সালের তথ্যানুযায়ী গৃহকর্মে নিয়োজিত মোট শিশু (৫-১৭ বছর বয়সী) শ্রমিক এক লাখ ২৫ হাজার। জাতীয় শিশুনীতি-২০১০ এর খসড়ায় বলা হয়েছে, ১৪ বছরের কম বয়সীদের সার্বক্ষণিক শিশুশ্রমে নিয়োগ করা যাবে না, কিন্তু বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে প্রায় ৩০০ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ অর্থনৈতিক কাজে শিশুরা শ্রম দিচ্ছে।দেশের প্রচলিত আইনে শিল্প কারখানায় শিশু শ্রম নিষিদ্ধ হলেও জীবিকার প্রয়োজনে শৈশব অবস্থায় অনেক শিশুকে নানা ধরনের শ্রমে নিয়োজিত হতে হচ্ছে ৷ শহর, গ্রাম উভয় অঞ্চলেই শিশু শ্রমিক নিয়োগ করা হয় ৷




সরকারের পরিসংখ্যান বিভাগের হিসেব মতে দেশের মোট শ্রমিকের ১২% শিশু শ্রমিক; এ হিসেবে কেবল মাত্র নিবন্ধনকৃত শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিশু শ্রমিকদের ধরা হয়েছে ৷ অনিবন্ধনকৃত বা ননফরমাল সেক্টরে কর্মরত শিশু শ্রমিকদের হিসেব করলে এ সংখ্যা আরো বাড়বে ৷ শুধু শহরাঞ্চলেই চরম দারিদ্র্য ও বঞ্চনার মাঝে ১৫ বছরের কম বয়সী যে সকল শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে তাদের সংখ্যা ১ঌঌ০ সালে প্রায় ২ঌ লক্ষ বলে এক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে ৷




আরও অতি বাস্তবতা হল নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরায় তাদের ঘরে সন্তান এলে সে শিশুটি হয় অবহেলিত, নিগৃহীত ও অধিকার বঞ্চিত। পরিবারের মধ্যেই সে শিশু পরগাছার মত বেড়ে ওঠে। দারিদ্রের কারণেই শিশুরা একটি কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়ায়। অতি অল্প বয়সে ভারী শ্রমের পথ বেছে নিয়ে মেনে নেয় সম্ভাব্য পঙ্গুত্বকে। নানা প্রতিবন্ধকতার সাথে যুদ্ধ করে বেড়ে ওঠে অধিকার বঞ্চিত শিশুরা। শিশুরা অনেক ক্ষেত্রে বয়স্ক শ্রমিকের কাজ করে প্রাপ্য মজুরী থেকে বঞ্চিত হয়। অদক্ষ শ্রমের দোহাই দিয়ে শিশুটিকে অধিক খাটিয়েও ন্যায্য পারিশ্রমিক দেয়া হয় না। শিশু শ্রমিকরা আইনের পথ চেনে না। ওরা নীরবে বেঁচে থাকার তাগিদে মুখ বুজে কাজ করে। পেটের জ্বালায় শিশুরা মালিক আর মনিবের দুর্ব্যবহার, অবহেলা সহ্য করেও স্বল্প আয়ে কাজ করে। আবার কোন শিশু জড়িয়ে পড়ে নানা রকম সমাজ বিরোধী কাজের সাথে। অথচ শিশুরা দেশের ভবিষ্যৎ জনশক্তি, আজকের শিশু আগামী দিনের নাগরিক এবং দেশের কর্ণধার। শিশুই আমাদের আশা ভরসা। শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্ব প্রথম দেশ থেকে দারিদ্র দূর করতে হবে। দূর করতে হবে নানা কুসংস্কার।যে শিশু আগামীর নাগরিক, সে শিশুর জীবন যদি অরক্ষিত হয়ে যায় তবে আমাদের গোটা সমাজই বিপণ্ণ হয়ে পড়বে। অতীত যেমন আমাদের মাঝে বেঁচে আছে। আমরাও বেঁচে থাকবো ভবিষ্যতের মাঝে। হয়তো ঠিক আমরা নই-আমাদের কীর্তি আর আমাদের স্বপ্ন। শিশুদের হাতেই জাতির উন্নয়ন সম্ভাবনার চাবিকাঠি তাই শিশুদেরকে গড়ে তুলতে হবে আমাদেরই। শিশুরা জাতির সেরা সম্পদ। আজ যারা শিশু, আগামীকাল হবে তারাই দেশ গড়ার সৈনিক। শিশুকে তার প্রাপ্য পূর্ণ অধিকার দিয়ে গড়ে তুলতে পারলেই সার্থক হবে বাংলাদেশ।https://www.facebook.com/MohammadMizanurRahmanBNS
আমি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি https://www.facebook.com/BangladeshNagarikShakti ''বাংলাদেশ নাগরিক শক্তি''  হিসাবে ঘোষণা করছি যে ''বাংলাদেশ নাগরিক শক্তি'' আপনার সমর্থন দিন সহযোগিতা করুন। ''বাংলাদেশ নাগরিক শক্তি'' দেশের নাগরিক সেবার সুযোগ পেলে সংসদে আইন পাশ করে শিশু অধিকার নিরশ্চিত করবে ইন শাহ্‌ আল্লাহ্‌।

Monday, February 13, 2017

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কি এবং কেন?

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কি এবং কেন? বলছি আমি===========


নং-১

রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস-এর আমলের ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেনটাইন ছিলেন শিশুপ্রেমিক,সামাজিক ও সদালাপী এবং খৃষ্টধর্ম প্রচারক। আর রোম সম্রাট ছিলেন বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী। ঐ সম্রাটের পক্ষ থেকে তাকে দেব-দেবীর পূজা করতে বলা হলে ভ্যালেন্টাইন তা অস্বীকার করায় তাকে কারারুদ্ধ করা হয় সম্রাটের বারবার খৃষ্টধর্ম ত্যাগের আজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করলে ২৭০ খৃস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন।
নং-২সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের অনেকেই প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসত এবং ফুল উপহার দিত। তারা বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক কথা বলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদ্দীপ্ত রাখত। এক কারারক্ষীর এক অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। অনেকক্ষণ ধরে তারা দু’জন প্রাণ খুলে কথা বলত। এক সময় ভ্যালেন্টাইন তার প্রেমে পড়ে যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় অন্ধ মেয়েটি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। ভ্যালেন্টাইনের ভালবাসা ও তার প্রতি দেশের যুবক- যুবতীদের ভালবাসার কথা সম্রাটের কানে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬৯ খৃষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদন্ড দেন।

নং-৩

খৃষ্টীয় ইতিহাস মতে, ২৬৯ খৃষ্টাব্দের কথা সাম্রাজ্যবাদী, রক্তপিপাষু রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের দরকার এক বিশাল সৈন্যবাহিণীর। এক সময় তার সেনাবাহিনীতে সেনা সংকট দেখা দেয়। কিন্তু কেউ তার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজি নয়। সম্রাট লক্ষ্য করলেন যে, অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে অত্যধিক ধৈর্যশীল হয়। ফলে তিনি যুবকদের বিবাহ কিংবা যুগলবন্দী হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেন। যাতে তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ না করে। তার এ ঘোষণায় দেশের যুবক-যুবতীরা ক্ষেপে যায়। যুবক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক ধর্মযাজকও সম্রাটের এ নিষেধাজ্ঞা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। প্রথমে তিনি সেন্ট মারিয়াসকে ভালবেসে বিয়ের মাধ্যমে রাজার আজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার গীর্জায় গোপনে বিয়ে পড়ানোর কাজও চালাতে থাকেন। একটি রুমে বর-বধূ বসিয়ে মোমবাতির স্বল্প আলোয় ভ্যালেন্টাইন ফিস ফিস করে বিয়ের মন্ত্র পড়াতেন। কিন্তু এ বিষয়টি এক সময়ে সম্রাট ক্লডিয়াসের কানে গেলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। ২৭০ খৃষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে সম্রাটের সামনে হাজির করলে তিনি তাকে হত্যার আদেশ দেন।

নং-৪

আরেকটি খৃষ্টীয় ইতিহাস মতে, গোটা ইউরোপে যখন খৃষ্টান ধর্মের জয়জয়কার, তখনও ঘটা করে পালিত হতো রোমীয় একটি রীতি। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে গ্রামের সকল যুবকরা সমস্ত মেয়েদের নাম চিরকুটে লিখে একটি পাত্রে বা বাক্সে জমা করত। অতঃপর ঐ বাক্স হতে প্রত্যেক যুবক একটি করে চিরকুট তুলত, যার হাতে যে মেয়ের নাম উঠত, সে পূর্ণবৎসর ঐ মেয়ের প্রেমে মগ্ন থাকত। আর তাকে চিঠি লিখত, এ বলে‘প্রতিমা মাতার নামে তোমার প্রতি এ পত্র প্রেরণ করছি।’ বৎসর শেষে এ সম্পর্ক নবায়ন বা পরিবর্তন করা হতো। এ রীতিটি কয়েকজন পাদ্রীর গোচরীভূত হলে তারা একে সমূলে উৎপাটন করা অসম্ভব ভেবে শুধু নাম পাল্টে দিয়ে একে খৃষ্টান ধর্মায়ণ করে দেয় এবং ঘোষণা করে এখন থেকে এ পত্রগুলো ‘সেন্ট ভ্যালেনটাইন’-এর নামে প্রেরণ করতে হবে কারণ এটা খৃষ্টান নিদর্শন, যাতে এটা কালক্রমে খৃষ্টান ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। অন্য আরেকটি মতে, প্রাচীন রোমে দেবতাদের রাণী জুনোর সম্মানে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছুটি পালন করা হতো।রোমানরা বিশ্বাস করত যে, জুনোর ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কোন বিয়ে সফল হয় না। ছুটির পরদিন ১৫ফেব্রুয়ারি লুপারকালিয়া ভোজ উৎসবে হাজারও তরুণের মেলায় র্যাফেল ড্র’র মাধ্যমে সঙ্গী বাছাই প্রক্রিয়া চলত। এ উৎসবে উপস্থিত তরুণীরা তাদের নামাংকিত কাগজের সিপ জনসম্মুখে রাখা একটি বড় পাত্রে ফেলত। সেখান থেকে যুবকের তোলা সিপের তরুণীকে কাছে ডেকে নিত। কখনও এ জুটি সারা বছরের জন্য স্থায়ী হত এবং ভালবাসার সিঁড়ি বেয়ে বিয়েতে গড়াতো। ঐ দিনের শোক গাঁথায় আজকের এই “ভ্যালেন্টাইন ডে”।

নং-৫
  
বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসের আবির্ভাব- ১৯৯৩ সালের দিকে বাংলাদেশে বিশ্ব ভালবাসা দিবসের আর্বিভাব ঘঠে। যায় যায় দিন পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমান। তিনি পড়াশোনা করেছেন লন্ডনে। পাশ্চাত্যের ছোঁয়া নিয়ে দেশে এসে লন্ডনী সংস্কৃতির প্র্যাকটিস শুরু করেন। তিনি প্রথম যায় যায় দিন পত্রিকার মাধ্যমে বিশ্ব ভালবাসা দিবস বাংলাদেশীদের কাছে তুলে ধরেন। তেজগাঁওয়ে তার পত্রিকা অফিসে কেউ চাকরী নিতে গেলে না কি সাথে তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে যেতে হতো। প্রেমের যুগললবন্দী কপোত-কপোতীকে দেখে ওনি না কি খুব খুশী হতেন। অভিধা প্রথম ব্যবহার করেন শফিক রেহমান। এজন্য শফিক রেহমানকে বাংলাদেশে ভালবাসা দিবসের জনক বলা হয়।ইসলামী শরীয়াত মোতাবেক ভালোবাসা দিবস- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন বা জীবন-ব্যবস্থা হিসেবে বাছাই করেছেন এবং তিনি অন্য কোন জীবন-ব্যবস্থা কখনও গ্রহণ করবেন না, তিনি বলেন: “এবং যে কেউই ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবন-ব্যবস্থা আকাঙ্খা করবে, তা কখনোই তার নিকট হতে গ্রহণ করা হবে না, এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের একজন ৷” (সূরা আলে ইমরান, ৩:৮৫) এবং নবী(সা.) বলেছেন, এই উম্মাতের মধ্যে কিছু লোক বিভিন্ন ইবাদতের প্রক্রিয়া ও সামাজিক রীতিনীতির ক্ষেত্রে আল্লাহর শত্রুদের অনুসরণ করবে ৷ আবু সাঈদ আল খুদরী(রা.) বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেন:“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের অনুসরণে লিপ্ত হয়ে পড়বে, প্রতিটি বিঘৎ, প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্যে [তাদের তোমরা অনুসরণ করবে], এমনকি তারা সরীসৃপের গর্তে প্রবেশ করলে, তোমরা সেখানেও তাদেরকে অনুসরণ করবে ৷” আমরা বললাম, “হে রাসূলুল্লাহ ! তারা কি ইহুদী ও খ্রীস্টান?” তিনি বললেন: “এছাড়া আর কে?” (বুখারী, মুসলিম) আজ মুসলিম বিশ্বের বহু স্থানে ঠিক এটাই ঘটছে, মুসলিমরা তাদের চালচলন, রীতিনীতি এবং উৎসব উদযাপনের ক্ষেত্রে ইহুদী ও খ্রীস্টানদের অনুসরণ করছে ৷ টিভি, পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন, স্যাটেলাইট চ্যানেল, ইন্টারনেটের মত মিডিয়ার প্রচারে কাফিরদের অনুসৃত সমস্ত রীতিনীতি আজ মুসলিমদের
ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচেছ এবং এর অনুসরণ ও অনুকরণ সহজতর হয়ে উঠেছে ৷ মুসলিম সমাজে প্রচলিত এরূপ বহু অপসংস্কৃতির সাথে একটি সাম্প্রতিক সংযোজন হচেছ “ভ্যালেন্টাইন’স ডে”, যা “ভালবাসা দিবস” নামে বাঙালী মুসলিম সমাজের যুবক-যুবতীদের মাঝে ঢুকে পড়েছে এবং ক্রমে জনপ্রিয়তা লাভ করছে, পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এ দিবসটি পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করছে ৷ এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামের আলোকে এই ভালবাসা দিবসকে মূল্যায়ন করে বাঙালী মুসলিম সমাজের মুসলিম যুবক-যুবতীদের বোধশক্তি ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে তাদেরকে কাফিরদের অন্ধ অনুসরণ থেকে নিবৃত্ত করা ৷ নিশ্চয়ই ইহুদী ও খ্রীস্টানসহ অন্যান্য কাফিরদের সংস্কৃতির অনুসরণের পরিসমাপ্তি ঘটবে জাহান্নামের আগুনে, তাই বর্তমান নিবন্ধের উদ্দেশ্য আমাদের যুবসম্প্রদায়কে জাহান্নামের পথ থেকে ফিরিয়ে জান্নাতের প্রশান্তির দিকে আহবান করা সবার প্রতি অনুরোধ রইলো এই লেখাটি আপনারা আপনাদের ওয়াল এ শেয়ার করেন , কারণ আপনার একটি শেয়ার ও পারে দশজন মানুষকে সচেতন করতে। শেয়ার করতে চাইলে এই পোস্টের উপরের দিকে দেখেন ব্লগ, ইমেইল, ফেইসবুক, টুইটার ও প্রিন্ট এ শেয়ার করার জন্য আইকন আছে। ওই আইকন এ ক্লিক করে আপনি পোস্টটি শেয়ার করতে পারবেন। আল্লাহ সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুন এবং সবাইকেকে সত্যের পথে পরিচালিত করুন"আমিন 
https://www.facebook.com/MohammadMizanurRahmanBNS 

Tuesday, February 7, 2017

বড়লোকের জন্য গরিব উচ্ছেদ

মতিঝিলের আমেরিকান লাইফ ইন্সুরেন্স কার্যালয় সংলগ্ন সামনের ফুটপাত।গত ১২ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের ফুটপাত দখলমুক্ত করার ঘোষণার পর থেকে এ অবস্থা। 
হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। তাহলে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং শুরু হলো কেন। নাকি বড়লোকের জন্য গরিব উচ্ছেদ কর্মসূচি চলছে? হকার উচ্ছেদ করা হচ্ছে রাস্তা-ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য। কিন্তু গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে রাস্তা আরও বেশি দখল হয়েছে। তবে হকার কী দোষ করল?
মতিঝিলের রহমান চেম্বার ভবনের সামনের রাস্তায় তিন স্তরে গাড়ি পার্কিং করা হয়। এতে দুই-তৃতীয়াংশ দখল যায় মতিঝিল-টিকাটুলী সড়কের একপাশ। এসব গাড়ির মধ্যে ছিল রাস্তার উল্টো পাশের বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাড়িও। মেটলাইফ আলিকো ভবনের সামনে ছিল শখানেক মোটরসাইকেল। এভাবে পুরো মতিঝিলের সড়কের দিকে তাকালে হকারের বদলে এখন গাড়ির দীর্ঘ লাইনের দেখা মিলবে। 

Sunday, February 5, 2017

গুম হয়ে যাবে সংবিধানও

দেশের প্রতিটি নাগরিকের জীবনের সুরক্ষা প্রদানের সাংবিধানিক দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু সেই অধিকারের হরণকর্তাও রাষ্ট্র আজ স্বয়ং! দেশের নাগরিকের যদি স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা না থাকে তাহলে তার দায় অবশ্যই সরকারের ওপরই বর্তাবে। রাষ্ট্র তার এই সাংবিধানিক দায় কোনো অজুহাতেই এড়াতে পারে না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কেউই আইন বা জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়। সে যে পর্যায়েরই হোক। এটাই গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের মূলমন্ত্র।
মানুষ এক সময় নিজের জীবন বাঁচানোর তাগিদে গুহায় বাস করত। নিরাপত্তার প্রয়োজনেই মানুষ গুহা থেকে বের হয়ে রাষ্ট্র বানিয়েছে। কিন্তু যখন এই রাষ্ট্রই মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় তখন মানুষ নিজেকে বাঁচাতে অন্য কোনো বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হয়। শঙ্কিত মানুষ প্রতিকার পাচ্ছে না নিত্যদিনের প্রতিযোগিতাময় গুপ্তহত্যায়। গুপ্তঘাতক যেন ছায়ার মতো ঘুরছে আমাদের চতুর পাশে। সর্বস্তরের মানুষ আজ আতঙ্কিত। দিন যতই যাচ্ছে পরিস্থিতির ততই অবনতি হচ্ছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। অথচ দেখা যাচ্ছে তাদের হাতেই গুম-খুন হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
মৃত ব্যক্তির লাশ পাওয়ার অধিকারটা পর্যন্ত মানুষ এখন হারাতে চলেছে। এক সময় মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চেয়েছে। আর এখন লাশ ফেরতের গ্যারান্টি চাচ্ছে। বছরের পর বছর প্রিয়জন বেঁচে আছে কি না সেই উৎকণ্ঠায় দুর্বিষহ দিন কাটছে পরিবারের। অপেক্ষার পালা যেন আর ফুরাচ্ছে না কোনোভাবেই। আপনজনের লাশটা সৎকার করার অধিকারটা পর্যন্ত আজ এদেশের মানুষের নেই।
আইন লঙ্ঘনের পরও সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখি না করে রক্ষা করে চলেছে। গুম ও হত্যার তদন্ত করতেও সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। বিরোধী দলের কর্মীদের গুম-হত্যা যেন রুটিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুশীল সমাজ এবং মানবাধিকার কর্মীদের ওপর চাপ ও হয়রানি বৃদ্ধির কারণে মানুষ আজ মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছে। দেশে এখন আইনের শাসন বলবৎ রয়েছে- এ কথা আজ মহাহাস্যরসে পরিণত হয়েছে। ব্যক্তির শাসন কখনো আইনের শাসনের পরিপূরক হতে পারে না। যে দেশে তুচ্ছ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের প্রয়োজন হয়, সেখানে গণহারে গুম-হত্যার নির্দেশ কে দিচ্ছে তা খতিয়ে বের করা জরুরি। কে বা কারা রাষ্ট্রকে এভাবে চ্যালেঞ্জ করে বসেছে সেটাও খুঁজে দেখতে হবে।
সোনার বাংলায় বিমানবন্দরগুলো আজ সোনা দিয়ে আর নদী-নালা-খাল-বিলগুলো লাশ দিয়ে ভরে গেছে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের লাশ আর ঢাকার উত্তরা থেকে প্রকাশ্যে অপহৃত যুবদল নেতার লাশ লক্ষ্মীপুরে ভেসে ওঠার ঘটনাসহ সব ঘটনাতেই পরিবারের অভিযোগ কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকেই গেছে। যত্রতত্র প্রকাশ্যেই সাদা পোশাকের লোকজন এভাবে গণহারে নির্বিচারে যাকে খুশি তাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির সময়ও পুলিশ ও সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সাদা পোশাকের লোকজনকে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়তে আমরা দেখেছি। রাষ্ট্রই যেন তাদের এই ইনডেমনিটি দিয়ে রেখেছে। অথচ আজ তারাই এই ইনডেমনিটির কারণে আরাধ্য হয়ে পড়েছে। সে কারণে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মুখেও শুনতে হয় 'সরকারের পেছনের সরকারকে আজ থামাতে হবে।'
সাদা পোশাকের অভিযান শুধু বন্ধ করলেই হবে না, সরকারের কালো কাজগুলোকেও বন্ধ করতে হবে। গাড়িতে স্বচ্ছ কাচ ব্যবহারের নির্দেশ দিলেই চলবে না, সরকারের মধ্যেও স্বচ্ছতা আনতে হবে। আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম গত ১৩ মাসে শুধু রাজধানীতেই ৫৩০টি পরিচয়হীন লাশ দাফন করেছে। আইন সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে গত বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ হওয়া মানুষের সংখ্যা ৬৮। অথচ এ বছর ৪ মাসেই এই সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যেতে চলেছে। পুরো দেশ আজ যেন এক মৃত্যু উপত্যকা। গত এক বছরে শুধু নারায়ণগঞ্জেই ৪৩টি লাশ পড়েছে। রিজওয়ানার স্বামী সিদ্দিকীর ঘটনা থেকে শুরু করে সেভেন মার্ডার কেনোটারই কোনো রকম সূত্র যখন মানুষ খুঁজে পায় না তখন মানুষের সন্দেহ প্রবল এক বিশ্বাসে পরিণত হয়।
ঝালকাঠির যুবদল নেতা মিজানুর রহমান জমাদ্দার এবং তার দুই সহযোগী মুরাদ ও ফোরকান, মোহাম্মদপুরের যুবদল নেতা মনজুর মোর্শেদ শিপু, মিরপুর এলাকার ব্যবসায়ী মাসুম হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল সম্পাদক শামীম হাসান ওরফে সোহেল, ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের ইসমাইল হোসেন, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আল মুকাদ্দাস ও ওয়ালিউল্লাহ, সিলেট জেলা ছাত্রদলের দিনার ও জুনায়েদ, চট্টগ্রাম বিএনপির প্রচার সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া, রাজশাহী ভাটাপা জামে মসজিদের ইমাম আমিনুল ইসলাম, মিরপুর থেকে অপহৃত ছাত্রদল নেতা মফিজুল ইসলাম রাশেদ, রাজশাহী মহানগর শিবিরের দফতর সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম মাসুম, জয়পুরহাট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম- এদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে অপহরণ করা হয়। আজ অবধি নিখোঁজ রয়েছেন এরা। শ্রমিক নেতা আমিনুল বা বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার বা প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এদের খবরের পেছনে চাপা পড়ে থাকে আরও অসংখ্য ইলিয়াস আলীর ড্রাইভার আর নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীরের পরিবারের কান্না।
রাষ্ট্র তখনই ব্যর্থ হয় যখন খুন হয়ে যাওয়া সন্তানের মা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে টেলিফোনে বলেন- 'বাবা, পারলেন না, আমার ছেলেকে বাঁচাতে!' এই আর্তনাদ যেন গোটা দেশের। এই আর্তনাদ আজ স্বয়ং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের। অসহায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে তাই তো এতটা অসহায় লাগে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এত অসহায় প্রতিমন্ত্রী কেন নিয়োগ দিতে হয় আমাদের? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণর্ এই মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর অধীনে থাকলেও তার দায়ভার প্রধানমন্ত্রীকে কেন নিতে হয় না? তাহলে এই দায় কার?
দেশে যে একটা মানবাধিকার কমিশন আছে সেটাও আজকে গুম হতে চলেছে। মানুষ যাবেটা কোথায়? গুম হওয়ার আশঙ্কায় কেউ কোনো কথা বলতে নারাজ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণমানুষের পক্ষে কথা বলার মানুষগুলো আজ কোথায়? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের পরিচিতি অক্ষুণ্ন রাখতে হলে অবশ্যই সব ধরনের বিচারবহিভর্ূত হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, গুম, খুনকে বন্ধ করতে হবে।
সরকারকে আইনের শাসনের রক্ষাকল্পে আইনকে নিজ হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা থেকেও দূরে থাকতে হবে। গুম খুন থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব খোদ সরকারের ওপরই ন্যস্ত। আর এক্ষেত্রে অভিযোগ যদি খোদ সরকারের বিরুদ্ধেই ওঠে তবে তো আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো আজ এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মুখে নিপতিত!
গুপ্তহত্যা নামক এই ভয়ঙ্কর খেলা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় আইনের শাসন, সংবিধান ও মানুষের সব অধিকারটুকু হয়তো এভাবেই একদিন গুম হয়ে যাবে।গুম হয়ে যাবে সংবিধানও। তাই দেরী না করে বাঁচার জন্য ঐক্য বদ্ধ হই। ''বাংলাদেশ নাগরিক শক্তি'' এর ছায়াতলে সমবেত হয়ে বজ্র কণ্ঠে আওয়াজ তুলি, আর নয় গুম খুন, নিজে বাঁচুন, দেশ বাঁচান আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। আমাদের ফেইচ বুক পেইজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন। ভবিষ্যতের এক মাত্র রাজনৈতিক দল  www.facebook.com/BangladeshNagarikShakti   

Saturday, February 4, 2017

সাহেব-বিবি-গোলাম মানুষ রুপি জানোয়ারদের খেলা

সাহেব-বিবি-গোলাম এইটা যে এখন মানুষ রুপি জানোয়ারদের খেলা। বুক পিঠ পেতে দেওয়া মানুষদের মধ্যেও কারও কারও কাছে হয়তো জুতাধূলি পাওয়াতেই জীবনের স্বার্থকতা। নারী বা পুরুষ, শিশু কিংবা বৃদ্ধ ব্যাপার না, মানুষের বুক পিঠ বা কাঁধের ওপর দিয়ে তাই তাদের অবিরাম চলা। ক্ষমতার রোগে মরছে কেঁপে ওরা। তাই তো দেখায় ওরা মানুষের উপরদিয়ে হেটে চলা।

অবশেষে মুসলিম জাতির পিতা বানিয়ে দিলো!!!

অবশেষে মুসলিম জাতির পিতা বানিয়ে দিলো(নাউজুবিল্লা....),,,খেয়াল করুন আপনারা উপরে বাংলাতে লিখেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধি আবার নিচে ইংরেজীতে লিখেছে মুসলিম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান...মুসলিম জাতির পিতা একমাএ হযরত ইবরাহীম আলাইহি (সাঃ) তাহলে আমরা মুসলমান হিসেবে  কি বলতে পারি...?? 
 
Copyright © 2014 Mohammad Mizanur Rahman. Designed by OddThemes | Distributed By Gooyaabi Templates